গরুর খামারে ঘুড়ে দাঁড়ানোর নায়ক নওগাঁর নিত্যানন্দ

0

 

নওগাঁ সদর উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের সত্যেন্দ্রনাথ পালের বড় ছেলে নিত্যানন্দ। শৈশব থেকেই বড় হয়ে পড়াশোনা করে ভালো চাকুরী করে বাবা-মা ও পরিবার দেখবেন বলে স্বপ্ন দেখলেও সংসারের অস্বচ্ছলতার কারণে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়েছেন সেই ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে থাকতেই। বাড়ির বড় ছেলে হওয়ায় সেই বয়সেই ধরতে হয়েছে ৬ জনের সংসারের হাল। নিজের স্বপ্ন পূরন না হলেও করেছেন ছোট দুই ভাইয়ের স্বপ্ন পূরন। দুই ভাইকে করেছেন উচ্চ শিক্ষিত, একজন এমবিবিএস চিকিৎসক অন্যজন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়েছেন পশু চিকিৎসক (ডিভিএম)।

নিত্যানন্দ ৮/৯ বছর পূর্বে মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন গরু পালন। প্রথমে বাড়িতেই একটি বকনা বাছুর গরু দিয়ে শুরু তার খামারি হওয়ার স্বপ্নের। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ধিরে ধিরে বাড়তে থাকে নিত্যানন্দের খামারের পরিধি।

করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে তাঁকে কিছুটা থমকে দাঁড়াতে হয়। গবাদি পশুর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও দুঃস্প্রাপ্যতা তাঁকে ভাবায়। পুঁজি সংকটে গরু নিয়ে পড়েন বিপাকে, কি করবেন বুঝে উঠতে না পেরে যোগাযোগ করেন উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর সাথে। তাঁদের পরামর্শে রেইজ প্রকল্প হতে ৩ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে পুরো উদ্যোমে শুরু করেন।

নিত্যানন্দ জানান, ‘করোনার পরে আমি পুঁজি সংকটে দিশেহারা হয়ে যাই, বিশেষ করে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমি বিপাকে পরে যাই। পরবর্তীতে মৌসুমী-রেইজ প্রকল্পের ঋণ উত্তোলন করি ও স্যারেদের সহযোগীতায় একটা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। সেখানে আমি জানতে পারি কিভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। সে অনুযায়ি কাজ করে এখন আমার খামারের অবস্থা আগের চাইতে অনেক ভালো।’

 
সরেজমিনে দেখা যায় নিত্যানন্দের খামারে বর্তমানে গরু আছে ৫টি যার মধ্যে ২টি গাভি, ১টি বাছুর ও ২টি ষাঁড় গরু আছে। গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ লিটার দুধ দহন করেন তিনি। তা দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় ভোক্তাদের কাছে বিক্রয় করেন। তাঁর গরুর দুধের মান ভালো হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এর বেশ চাহিদাও রয়েছে। এছাড়া খামারের গরুর পয়ঃবর্জ্য কে পুণঃব্যবহার করেন বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে। এই গ্যাস নিজে বাড়িতে গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি খামারের গরুর জন্য খাবার প্রস্তুতের কাজেও ব্যবহার করেন তিনি। নিত্যানন্দের খামার থেকে প্রতি মাসে সকল খরচবাদ দিয়ে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করছেন।

বর্তমানে স্ত্রী ও ৭ বছরের তৃতীয় শ্রেণী পড়ুয়া কন্যা সন্তানসহ ৩জন সদস্যের সুখি পরিবার নিত্যানন্দের। তিনি জানান তাঁর যে স্বপ্ন অধরা ছিলো ভবিষ্যতে তাঁর সন্তান পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হয়ে তা পুরণ করবে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিত্যানন্দের মত উদ্যোক্তাগণ এগিয়ে গেলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশের অর্থনীতি, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান, গড়ে উঠবে সোনার বাংলাদেশ।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)

Search This Blog

To Top