মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলো বদলে দিয়েছে প্লাবণভূমি মাছচাষের চিত্র

0

ল্যান্ডি সেন্টারের শৌচাগার ব্যবহারের পর টিউবওয়েলের পানি দিয়ে হাত-পা ধূচ্ছেন পথচারী 

দাউদকান্দি উপজেলা সারা বাংলাদেশে প্লাবনভূমি অঞ্চলের মডেল হিসেবে পরিচিত। দেশের মাছের চাহিদার প্রায় ৩৫% শতাংশ পূরণ করে এই অঞ্চলের উৎপাদিত মাছ। এই অঞ্চলের মৎস্যচাষীদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো মাছ আহরনের পর তা সঠিক উপায়ে গ্রেডিং ও শর্টিং করে বাজারজাতকরনের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও যথাযথ ল্যান্ডিং সেন্টার না থাকায় সনাতন পদ্ধতিতে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরী পাটাতনই ব্যবহার করতেন। কাঠ বাঁশের পাটাতন নড়বড়ে, দূর্বল ও সংকীর্ণ হওয়ায় দুই জনের বেশি একসাথে কাজ করতে পারে না। ফলে কাজ হয়ে যায় ধীর গতির, আর মাছ ও পানিতে পরিবেশ হয়ে যায় কর্দমাক্ত। কাঠ বাঁশের ল্যান্ডিং সেন্টার প্রতি তিন মাস পরপর ঠিক ও রক্ষনাবেক্ষণ করতে গিয়ে চাষীদের বছরে অতিরিক্ত খরচ হতো প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। এছাড়াও বৃহৎ এলাকায় মাছের খাবার দেয়া ও মাছ আহরণ করতে গিয়ে পরে শ্রমিক আহত হওয়া ও স্বাস্থ্যহানী তো আছেই। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও সুপেয় নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সময়ই কাজে আসতো ছন্দপতন।

এরপরই মাছচাষীরা স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এসিসটেন্স (সিসিডিএ)’র এসইপি প্রকল্পের খবর পান, মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধার পাশাপাশি কারিগরি নানা সুবিধা সমৃদ্ধ এসইপি প্রকল্প থেকে গ্রহণ করেন ঋণ। এসইপি প্রকল্পের নন-রেভিনিউ জেনারেটিং এক্টিভিটি এর আওতায় এ বছর দুটি ল্যান্ডিং সেন্টার করে দেয়ার সুযোগ ছিলো। মাছচাষীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিসিডিএ এসইপি প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ সকলে মিলে যথাযথ উপায়ে সোশ্যাল স্ক্রিনিং সভার মাধ্যমে নির্ধারণ করেন আদমপুর গ্রামের মাছরাঙা মৎস্য প্রকল্পে একটি ল্যান্ডিং সেন্টার বিশেষ প্রয়োজন। যে কথা সেই কাজ, সকল নিয়ম রক্ষা করেই কাজ করা হয় ল্যান্ডিং সেন্টার এর।

ল্যান্ডিং সেন্টার টি সম্পন্ন হওয়ায় মাছচাষীদের মাছ আহরণ পরবর্তী বাজারজাতকরনের জন্য যথাযথ গ্রেডিং শর্টিং এর জন্য পাকা মেঝে নির্মান করা হয়েছে। এর সাথে আছে দুই বা তার অধিক শ্রমিক একইসাথে কাজ করতে পারে এমন সু-প্রসস্থ সিঁড়ি, স্বাস্থ্যসম্মত দুটি টয়লেট এর পাশাপাশি নিরাপদ সুপেয় পানির জন্য রয়েছে টিউবওয়েল। যার মাধ্যমে এলাকার ৪টি গ্রামের মাছচাষী ও সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারবেন এই সুবিধা। এছাড়াও পূর্বে মাছের পানিতে যে পরিবেশ দূষিত হতো তা এখন নেই। অনায়াসে এখন মাছ নৌকা থেকে আহরণ করে গ্রেডিং ও শর্টিং করে সহজেই বিশেষায়িত অক্সিজেন ট্যাংকে তুলে দেয়া যাচ্ছে। এতে বাঁচছে সময় কাজে ফিরেছে ছন্দ। স্থায়ী হওয়ায় যেমন কমেছে শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনা, তেমনি চাষীদের বছর শেষে অতিরিক্ত দেড় লক্ষ টাকাও বাঁচলো। এই ল্যান্ডিং সেন্টার টি হওয়ায় এই এলাকার মাছচাষীরা ভিষন খুশি এবং তারা বিশ্বাস করেন এই ল্যান্ডিং সেন্টার বদলে দিবে এই এলাকার সার্বিক মাছ চাষের চিত্র।

পানি ও টয়লেটের সুবিধা সহ কর্ম-এলাকায় (দাউদকান্দি, মুরাদনগর, তিতাস ও চান্দিনা) ৬টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে সিসিডিএ‘র সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি) এতে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করেছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও বিশ্ব ব্যাংক।

মাছরাঙা মৎস্যচাষ খামারে নির্মিত টয়লেট ও পানির সুবিধাসহ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র


Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)

Search This Blog

To Top