বায়োফ্লক মাছচাষ : বাড়ির উঠানেই কর্মসংস্থান লাভলি-বিল্লাল দম্পতির

0


বায়োফ্লক ট্যাংকে মাছ পরীক্ষা করছেন বিল্লাল হোসেন


দাউদকান্দি উপজেলার কুশিয়ারার মোঃ বিল্লাল হোসেন-লাভলি বেগম দম্পতি। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ বিল্লাল হোসেন মাছ চাষের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততার ফলে তিনি সন্ধান পান বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মৎস্যচাষ প্রযুক্তির। অনেকের মুখে মুখে শুনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে শুরু করার ব্যপক আগ্রহ প্রকাশ করেন। নিজেদের বাড়ির উঠানে বেশ কিছু পতিত জমি আছে তার। কিন্তু সেটাও জঙ্গলে আবৃত। ভাবলেন এখানেই গড়ে তুলবেন নিজের কর্মসংস্থান, করবেন বায়োফ্লক মাছচাষ। যেই কথা সেই কাজ। প্রথমে সব আগাছা পরিস্কার করে উপযোগি করে গড়ে তোলেন। টার্পুলিন ও লোহার খাচায় তৈরী করেন দুটি ১০ হাজার লিটারের বায়োফ্লক ট্যাংক। প্রথমে পরিক্ষামূলক তেলাপিয়া মাছ চাষ আরম্ভ করেন। নানা অব্যবস্থাপনা ঠিক মতো না জানা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থাকায় বার বার ব্যর্থ হয়ে শেষে এই বায়োফ্লক পদ্ধতি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দু এক দিন পর সময় সিসিডিএর কুশিয়ারা মহিলা সমিতির ঋণ কার্যক্রমের সাথেও যুক্ত হন। সঞ্চয় জমা রাখা শুরু করেন মোঃ বিল্লাল হোসেন এর স্ত্রী লাভলি বেগম। সেই সমিতির ঋণ কর্মকর্তার নিয়মিত সমিতির আলোচনায় জানতে পারেন এসইপি প্রকল্প সম্পর্কে। জানতে পারেন সেখানে মাছ চাষে নানা সেবা দেয়া হয়। এই তথ্য শুনে তা মোঃ বিল্লাল হোসেন এর কাছে পৌঁছে দেন লাভলি বেগম। সেই ঋণ কর্মকর্তার কাছ থেকে নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করেন এসইপি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে। তাঁর বায়োফ্লক সংক্রান্ত সমস্যার কথাও জানান টেকনিক্যাল অফিসার (ফিশারিজ) এর কাছে। এই শুনে একদিন তাঁর খামার পরিদর্শন করেন এসইপি প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ। মোঃ বিল্লাল হোসেন ও লাভলি দম্পতিকে অভয় দিয়ে বায়োফ্লক বিষয়ে প্রশিক্ষণ এ অংশগ্রহনের জন্য বলেন। সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর মোঃ বিল্লাল হোসেন পুণঃউদ্যোমে শুরু করেন আবারো।

তবে এবার শুরু করার জন্য সিসিডিএ-এসইপি প্রকল্পের পক্ষ থেকে ‘মাছচাষে ডিফারেন্ট টেকনোলজি’ বিষয়ে প্রদর্শনীর আওতায় আনা হয় তাঁর খামারকে। বায়োফ্লক মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, মাছের খাদ্য, ভালো মানের প্রোবায়োটিক, এফসিও যন্ত্রাংশ, ২০০০ পিস শিং মাছের পোনা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ইত্যাদি প্রদান করা হয় তাঁকে। প্রদর্শনী পেয়ে যেনো কাজে আরো গতি পেলেন মোঃ বিল্লাল হোসেন। এবারে পূর্বের ২টি ট্যাংকের সাথে নতুন করে নির্মাণ করেন ৩৫ হাজার লিটারের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন তৃতীয় ট্যাংকটি। তিনটি ট্যাংকে পুরোদমে শুরু করলেন বায়োফ্লক ট্যাংকে তেলাপিয়া ও শিং মাছ চাষ। পূর্বে কোন বারই ভালো উৎপাদন পান নি তিনি। এবার বড় ট্যাংকে প্রতি কেজিতে ৬০০ পিস মাপের মোট ৮ হাজার পিস পোনা ছাড়েন। ৩০ দিনের মাথায় সেই মাছ হয় প্রতি কেজিতে ২০/২৫টি। এছাড়া বাকি দুটি ট্যাংকে চাষ করছেন তেলাপিয়া মাছ। সঠিক মাত্রায় প্রোবায়োটিক না দেয়া, পানিতে এ্যামোনিয়া পরিক্ষা না করা, সঠিক সময়ে পানি পরিবর্তন না করাসহ নানা কারনে ফলনে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেয় তার। সেখান থেকে নিয়মিত খাদ্য প্রয়োগ ও সঠিক মাত্রায় প্রোবায়োটিক ব্যবহার ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ভালো ফল পেতে শুরু করেন মোঃ বিল্লাল হোসেন। 

লাভলী বেগম-বিল্লাল হোসেন দম্পতির বায়োফ্লক প্রদর্শণী ট্যাংক

বায়োফ্লক ট্যাংকের উৎপাদন এর কথা বলতে গিয়ে বিল্লাল হোসেন বলেন- ‘শিং মাছের ট্যাংক হতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ কেজি মাছ বিক্রয় করেছি যেগুলো হয়েছিলো কেজিতে ১০/১৫টি। এখনো প্রায় ২০০ কেজি শিং মাছ ট্যাংকে মজুদ আছে যেগুলো বিক্রয় করছি ক্রমান্বয়ে। এছাড়াও অপর একটি ট্যাংক থেকে তেলাপিয়া মাছের পোনা হিসেবে প্রায় ১০০০ পিস এলাকার অন্যান্য চাষীর কাছে বিক্রয় করেছেন, যেগুলো কেজিতে ৩০টি হয়েছিলো। আমার এই পুরো সময়ে সিসিডিএ-এসইপি প্রকল্পের কর্মকর্তারা আমাকে সব সময়ই কারিগরি নানা পরামর্শ ও খামার পরিদর্শন করে আমাকে নানা ভাবে সহায়তা করেছেন। এখন আমার শখ আমার আয়ের উৎসে রুপান্তরিত হয়েছে। আমার অন্যান্য আয়ের পাশাপাশি এই আয় আমার পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে সহযোগিতা করছে। শুধু তাই নয় আমার যে জমিটি অব্যবহৃত ছিলো সেটির পরিপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে। এটিও আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

বিল্লাল হোসেন যুক্ত করেন- আমার এই ঘুরে দাঁড়ানো গল্প এলাকার অনেকেই অবগত আছে। বিশেষ করে বেকার যুবক ও কলেজ পড়–য়া ছাত্ররা আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেকেই শুরুও করেছে আমার কাছে পরামর্শ নিয়ে। তবে যেই পরামর্শ নিতে আসে আমি সিসিডিএ এসইপি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছি। সেখান থেকেও তাঁরা পরামর্শ দিচ্ছেন। এলাকায় যুবকদের নৈতিক অবক্ষয় কমাছে, যুবকরা আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলছে, এতে করে এলাকায় বেকার যুবকের সংখ্যা যেমন কমছে তেমনি আর্থ-সামাজিক অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে।

আমার এই পরিবর্তন আমার জীবনে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ উদ্যোগ নিয়ে তা যদি ব্যর্থ হয়ে যেতো আমি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতাম। সিসিডিএ এসইপি প্রকল্পের এই সহায়তার ফলে আমি আবারো আমার সখের কাজে ফিরেছি এবং বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। 





Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)

Search This Blog

To Top