মাছ চাষীদের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে উঠেছেন পুটিয়ার নাজমুল হুদা

0

দাউদকান্দি উপজেলার পুটিয়া বাসস্ট্যান্ড মোড়ের মাছের খাদ্য ও উপকরণ বিক্রেতা এসএম নাজমুল হুদা। প্রায় ১৫ বছর যাবৎ তিনি করছেন এই ব্যবসা। দীর্ঘ দিনের পরিচিতি ও ব্যবসা ভালো বুঝার কারণে বেশ সুখেই ছিলেন। তাঁর সুখের দিনে বাধ সাধে ২০২০ সাল। 
করোনা মহামারীতে যখন পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত তেমনি তিনিও তার ব্যবসার পুঁজি সংকটে, পড়েন মহা দুঃশ্চিন্তায়। কোনমতে চালিয়ে নিচ্ছেন নিজের ব্যবসাটি। এরই মধ্যে তিনি খবর পান স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা সিসিডিএ তে এসইপি প্রকল্পের। 

জানতে পারেন নিরাপদ মৎস্য খাদ্য ও উপাদান সামগ্রী বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান কে সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে তারা। এসইপি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। সেই সাথে খোঁজ খবর রাখতে থাকেন কোন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে কি না মাছের খাদ্য ও সামগ্রী বিক্রয় বিষয়ক। এসইপি প্রকল্পের আয়োজনে নির্ধারিত দিনে প্রশিক্ষনে অংশগ্রহণ করেন এসএম নাজমুল হুদা।

নিজ সেবাকেন্দ্রে চাষীদের সেবা দিচ্ছেন এসএম নাজমুল হুদা
এরপরই যথাযথ নিয়মে মেনে গ্রহণ করেন ঋণ। ঋণ নিয়েই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আনেন পরিবর্তন। প্রশিক্ষনের জানা বিষয়গুলো মাথায় রেখে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মেঝেসহ পূর্বের ভাঙাচোরা পুরোনো দোকান ঘরটি করেন পাকা। পূর্বে যে কোন প্রতিষ্ঠানের ফিশফিড ও উপাদান সামগ্রী বিক্রয় করলেও এখন তিনি শুধু গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য ও খাদ্যপন্য বিক্রয় করেন। এসএম নাজমুল হুদা জানান- “মানহীন খারাপ জিনিষ আমাদের সবার জন্যই খারাপ। আমি যদি মাছকে খারাপ বা মানহীন খাবার দিই তাহলে তা সঠিক সময়ে বৃদ্ধি পাবে না। চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তারা ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমার ব্যবসা তখন বন্ধ হয়ে যাবে। তাই প্রশিক্ষণ থেকে জেনেছি ভালো মাছের খাদ্য ও উপাদান সম্পর্কে। আমি এখন সেগুলোই বিক্রয় করি।” তিনি আরো বলেন- “আমার নিজের পুকুরে খাদ্য ও উপাদানগুলো প্রয়োগ করি ফলাফল ভালো পেলে চাষীভাইদের হাতেও সেই জিনিষ তুলে দিই।” 

শুধু নিরাপদ মাছের খাদ্য ও উপাদানই নয় তিনি মাছ চাষীদের নানা সমস্যায় তাঁদের পরামর্শ সহায়তাও প্রদান করেন। সহায়তা পায় বলেই অনেক মাছচাষি তার কাছেই পরামর্শ নেন। তিনি বলেন – “স্থানীয় মাছ চাষী মাসুদ রানা, এইবারের খরা মৌসুমে প্রচন্ড তাপদাহে তার মাছের সমস্যা দেখা দেয়। মাসুদ ছুটে আসেন আমার দোকানে, আমি সবকিছু শুনে তাঁকে পরামর্শ দিই পুকুরে ভিটামিন সি প্রদানের। সেটি প্রয়োগ করে তাঁর মাছ মরা বন্ধ হয় আলহামদুলিল্লাহ।” এছাড়া তিনি চাষীদের সার্বক্ষনিক আধুনিক নানা প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেন ও ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করেন। যেমন- পুকুরে এয়ারেটর ব্যবহার, প্রো-বায়োটিক এর ব্যবহার, চুন, লবন ইত্যাদি ব্যবহার করতে বলেন সবাইকে। এছাড়াও এসএম নাজমুল হুদা এসইপি প্রকল্পের টেকনিক্যাল অফিসার (ফিশারিজ) এর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেই চাষীদের পরামর্শ প্রদান করছেন। 

এছাড়া এসএম নাজমুল হুদা তাঁর দোকান বা সেবা কেন্দ্রের পরিবেশ সুরক্ষায়ও কাজ করছেন। পিপিই ব্যবহার, ভালা সাইন সিম্বল ব্যবহার করছেন তিনি। এই সব কিছুর জন্য তিনি সিসিডিএ’র এসইপি প্রকল্পের কাছে কৃতজ্ঞ বলে জানান। আজ এসএম নাজমুল হোসেন মৎস্য সেবা দাতা (এফএসপি) হিসেবে সকল মাছচাষীর অকৃত্রিম বন্ধুতে পরিনত হয়েছেন।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)

Search This Blog

To Top