মৎস্যচাষে মানসম্পন্ন মৎস্য খাদ্য সরবরাহ করছে বিএইচ এগ্রো : মান ভালো হওয়ায় বাড়ছে চাহিদা

0

তরুন উদ্যোক্তা সাইদুর রহমান। পড়াশোনা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হলেও ঝোঁক তাঁর দেশীয় কৃষিতে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ও তার বড় ভাই নূরুদ্দিন আহম্মেদ চারপাশে বৃহৎ পরিসরে মাছচাষ দেখে আসছেন যা তাঁকে সবসময় ভাবায়। সেই সাথে সে সময় থেকেই দেখে আসছেন মাছের খাদ্য ও বিভিন্ন উপাদানে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান নিয়ে চাষীদের হতাশা। মনে মনে ভাবেন কিছু একটা করা দরকার। দুই ভাই সেই লক্ষ্য নিয়েই যাত্রা শুরু করেন। শুরুতে নিজেদের মাছচাষ খামারের প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদনের কাজে লাগেন। নিজ এলাকা দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ এর হরিপুরে ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করেন বিএইচ এগ্রো নামের ছোট্ট কারখানা। সেখানে ভ্ট্টুা, ধানের কুড়া, খৈল, শুটকি মাছের গুড়াসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সহযোগে শুরু করেন হাতে তৈরী খাদ্য উৎপাদন। প্রতিদিন নিজের পুকুরের জন্য প্রায় ১ টন (১০০০ কেজি) খাদ্য প্রস্তুত করতেন। প্রয়োজনীয় আমিষ ও খাদ্য উপাদান সঠিক মাত্রায় থাকায় ভালো ফল পান তিনি। এতে পরের বছরই অন্যান্য চাষীরাও তাঁর কাছে খাদ্য প্রস্তুত করে নেয়ার আগ্রহ দেখায়।

বিএইচ এগ্রোর উৎপাদিত মৎস্য খাদ্য

অনেকেই যখন খাদ্য প্রস্তুত করে নেয়ার আগ্রহ দেখান স্বাভাবিক ভাবেই তারা অনেক খুশি হন। এর পাশাপাশি এত পরিমান মৎস্য খাদ্য সরবরাহ নিয়েও দুঃশ্চিন্তায় পড়েন। কারণ এত পরিমান মৎস্যখাদ্য প্রস্তুত ও সরবরাহ করতে হলে দরকার আধুনিক যন্ত্রাংশ, সু-পরিসর জায়গা, উন্নত কর্ম-পরিবেশ। সাইদুর রহমান বলেন-‘এই সময় দুঃখ আর আনন্দের মিশ্র অনুভুতিতে পরে যাই। একটাই চিন্তা করোনা মহামারিতে এতগুলো টাকা কোথায় পাই। সহজ শর্তে খাদ্য উৎপাদনে ঋণ প্রদান করে এমন কোন প্রতিষ্ঠানও নেই। আমার এক বন্ধু সিসিডিএর সন্ধান দেয় আমাকে। আমি স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারি সিসিডিএ’র এসইপি প্রকল্পের পিলেট ফিড মেশিন স্থাপন খাতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করবে। যথাযথ নিয়ম মেনে আমিও আবেদন করি, এর প্রেক্ষিতে এসইপি কর্মকর্তা ও উর্দ্ধতনরা কারখানার জায়গা পরিদর্শন করে ২০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করে।’

তিনি আরো বলেন-‘সত্যি বলতে আমরা যেন সেসময় আশার আলো দেখতে পাই, ঋণ গ্রহণের পর এসইপি প্রকল্পের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পেরে ধীরে ধীরে আমার অবস্থা বদলাতে থাকে। শুরুতেই আমার জমানো টাকা আর ঋণের টাকা একত্র করে উন্নত যন্ত্রাংশ সংযোজন করি। এছাড়াও ক্রাশার মেশিন, মিক্সিং মেশিন ও ড্রায়ার মেশিন যুক্ত করেছি যা বৃহৎ পরিমান চাহিদায় যোগান দিচ্ছে। চাষী পর্যায়ে মূলত ডোবা, ভাসা ও প্রিমিক্স এই তিন ধরনের মৎস্য খাদ্যের চাহিদা রয়েছে। এখন প্রতিদিন ৬ টন (৬০০০ কেজি) মৎস্য খাদ্য উৎপাদন করছি। আর প্রায় ১০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’  

বিএইচ এগ্রো সুরক্ষিত কর্মস্থল ও কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করতে এসইপি প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ সম্মত বিভিন্ন অনুশীলন সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য পিপিই, প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স, অগ্নি নির্বাপনে ফায়ার ইস্টিঙ্গুইশার ও প্রশিক্ষণ, প্রাকৃতিক আলোর জন্য ট্রান্সপারেন্ট শিট, ধুলিকনা বের করে দিতে নিরাপদ এক্সস্টার ও ভালো সাইন সিম্বল নিশ্চিত করেছেন। এগুলো ব্যবহারে কর্মীদের নিয়মিত পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করছেন।

গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিড প্রোফাইল হেভি মেটাল টেস্টে তাঁদের খাবারের গুনগত মান সঠিক পাওয়া গেছে।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)

Search This Blog

To Top