নওগাঁ সদর উপজেলার চকপ্রাণ
এলাকার বাসিন্দা মোঃ তৌকির। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়েছেন। একেবারে কৈশোর
বয়স থেকেই নিজে কিছু করার প্রেরণা তাকে তাড়া করতো। সেই চেষ্টা থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি
শুরু করেন স্থানীয় একটি দোকানে সহকারীর কাজ। মূল উদ্যেশ্য ছিলো ব্যবসাটা শেখা। এরপর
পারিবারিক কারণে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শুরু করেন বিক্রয় প্রতিনিধির চাকুরী। সেখান
থেকে নিজের সেই স্বপ্ন আবারো তাকে তাড়া করতে থাকে। চাকুরীতে স্বাধীনতা না পাওয়ায় তিনি
নিজে ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা দৃঢ় করেন। এরপরই তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে নিজের এলাকায়
শুরু করেন তার স্বপ্ন নির্মানের কাজে। নিজের জমানো প্রায় ৩৫ হাজার টাকায় স্থানীয় মোড়ে
একটি দোকান ঘর নিয়ে শুরু করেন সার, বীজ, কীটনাশকসহ কৃষিপণ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু
পণ্যের দোকান ‘মেসার্স মুন ট্রেডার্স’।
তৌকির জানান- ‘যখন চাকুরী
ছাড়লাম সবাই আমাকে পাগল বলে উপহাস করতে লাগলো। ব্যবসা শুরু করার কথা শুনে স্থানীয় মানুষজন
আমার বাবা ও পরিবারের সদস্যদের কাছে আমার সমালোচনা করতো। মাঝে মাঝে হতাশ লাগলেও তাতে
গুরুত্ব না দিয়ে আমার কাজ করে যেতে লাগলাম। এখন যেসব মানুষ আমায় উপহাস করতো এখন তারাই
আমার নিয়মিত সেবাগ্রহীতা।’
তৌকির তার দোকানের পণ্যের
চাহিদা বাড়ায় পরে যান পুঁজি সংকটে। সে সময় মৌসুমী-রেইজ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি ৭০ হাজার
টাকা ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন। পাশাপাশি নতুন ব্যবসায়ী হওয়ায় ১৬ দিন ব্যাপী ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা
বিষয়ক প্রশিক্ষণেও অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানে জানতে পারেন সঠিক ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকি
ব্যবস্থাপনা, আত্ম-নিয়ন্ত্রন, উদ্যোক্তার গুণাবলি ইত্যাদি বিষয়ে। এগুলো জানার পর তিনি
তার প্রতিষ্ঠানে তা প্রয়োগ শুরু করে দেখলেন বেশ ভালো সুফল পাচ্ছেন। স্থানীয় মানুষের
কাছে তিনি ব্যবসায়ীর পাশাপাশি হয়ে উঠলেন তাঁদের পরামর্শক। বর্তমানে প্রতি মাসে তাঁর
গড় আয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
সঠিক ব্যবস্থাপনা মেনে
ব্যবসা পরিচালনা করলে যে কোন বাঁধাই বাঁধা নয় তা দেখালেন তৌকির আহম্মেদ। তৌকির বর্তমানে
ব্যবসায়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ব্যবসার পাশাপাশি ১৫ কাঠা জমিতে আগাম
জাতের সবজি চাষ শুরু করেছেন বলে জানান। এটাতেও তিনি সঠিক ব্যবস্থাপনা মেনে কাজ করে
সফল হবেন বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদি তরুন উদ্যোক্তা তৌকির।